ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইন | Graphic Design As a Career

ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইন | Graphic Design As a Career

গ্রাফিক ডিজাইন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় এক পেশা। আর পেশা হিসেবে এর জনপ্রিয়তার প্রথম কারন, যেকোন বয়স বা মাধ্যম থেকে, যে কেউ এসে স্বাধীনভাবে এ কাজ করে উপার্জন করতে পারে। তাইতো দিন দিন এ ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনবল।
এ লেখায় আমি তুলে ধরার চেষ্টা করবো গ্রাফিক ডিজাইন কি? (What is Graphic Design?) কি কাজ করা হয় এ সেক্টরে? (What does a graphic designer do?) কিভাবে উপার্জন করা যায় এবং ক্যারিয়ার হিসেবে কতটুকু গ্রহনযোগ্য এ পেশা (How to and how much a graphic designer earn?) এ সবকিছু নিয়ে।


গ্রাফিক ডিজাইন কি | What is Graphic Design

গ্রাফিক ডিজাইন জানার পূর্বে আমরা প্রথমেই জানি ডিজাইন কি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের চেয়ারম্যান জনাব ইসরাফিল প্রাং এর মতে, "কোন শিল্প পূর্ণ সমাপ্তির পূর্বে যে দৃশ্যমান পরিকল্পনা করা হয় সেটাই মূলত ডিজাইন।"

অর্থাৎ কোন কিছু করার পূর্বে তা নিয়ে যে প্ল্যান বা পূর্ব পরিকল্পনা করা হয় সেটাই মূলত ডিজাইন। যেমনঃ আপনি একটি বাড়ি বানাবেন। সেটা করার আগে অবশ্যই আপনাকে বাড়ির জন্য একটি নকশা বা ডিজাইন করতে হয়। আবার ধরুন আপনি একটি জামা বানাবেন। দর্জিকে অবশ্যই জামাটা কিভাবে বানাবেন সেটা বর্ণনা করবেন অথবা অন্য কোন ডিজাইন দেখাবেন। যা আপনার দর্জিকে কাঙ্খিত ডিজাইনের জামাটি বানাতে সাহায্য করবে।এই ডিজাইনকে যখন আমরা ছবি(image), টেক্সট(Text), আইকন(icon), ইলাস্ট্রেশন(Illustration), রঙ(Color) ব্যবহার করে ভিজুয়াল কমিউনিকেশন (Visual communication) বা দৃশ্যমান যোগাযোগ এর মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাই, তখন তাকে আমরা গ্রাফিক ডিজাইন বলতে পারি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি আপনার পণ্যের প্রসারের জন্য, পণ্যের ছবি এবং আপনার কাঙ্ক্ষিত টেক্সটের সমন্বয়ে একটি বিজ্ঞাপন (Advertisement) তৈরি করলেন।
যা দেখে গ্রাহক আপনার পণ্যটি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং টেক্সট দেখে পণ্যটির সাথে সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহকেও জানতে পারলেন। অর্থাৎ ডিজাইনটি ভিজুয়াল কমিউনিকেশন এর মাধ্যম হিসেবে কাজ করলো। সুতারং, এ ডিজাইনটিকে আমরা গ্রাফিক ডিজাইন বলতে পারি।

ডিজাইনের মাধ্যমে সাধারন মানুষের মাঝে যোগাযোগ তৈরি করাই হল গ্রাফিক ডিজাইনের মূল লক্ষ্য।


লোগো, পোস্টার, ইলাস্ট্রেশন ইত্যাদি গ্রাফিক ডিজাইনের উদাহরন। আমরা যদি লক্ষ্য করি এখানে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয়ই, ভিজুয়াল বা দৃশ্যগত বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে সাধারন মানুষকে কোন তথ্য সরবরাহ করে এবং ডিজাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ তৈরি করে।

উপর্যুক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ডিজাইন এবং গ্রাফিক ডিজাইন কি তা নিয়ে সহজবোধ্য একটা ধারনা পেলাম। এবার জানা যাক একজন গ্রাফিক ডিজাইনার কি ধরনের কাজ করে থাকেন।


গ্রাফিক ডিজাইনার যে ধরনের কাজ সমূহ করে থাকেন :
পূর্বেই বলা হয়েছে গ্রাফিক ডিজাইন কাজ করে ভিজুয়াল কমিউনিকেশনের মাধ্যম হিসেবে। সুতারং ভিজুয়াল কমিউনিকেশন এর সাথে জড়িত সকল বিষয়গুলোই একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের কাজের আওতাভুক্ত।

প্রিন্ট ডিজাইন যেমনঃ লোগো ও ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি ডিজাইন, বিজনেস কার্ড, ব্যানার ডিজাইন, পোস্টার ডিজাইন, বিলবোর্ড ডিজাইন, কার্ড ডিজাইন, বইয়ের কভার ডিজাইন, প্যাকেজ ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশন ইত্যাদি
এ ছাড়াও ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য করা (যে সকল ডিজাইন স্ক্রিনের মাধ্যমে দেখতে হয়) সোশ্যাল মিডিয়া ডিজাইন (Social Media Design), মোশন গ্রাফিক্স (Motion Graphics), ইনফোগ্রাফিক্স প্রেজেন্টেশন(Infographics Presentation),এডভার্টাইজমেন্ট (Ads), মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইট ডিজাইন ডিজাইন (UI/UX Design), ,অ্যানিমেশন (Animation) ইত্যাদি কাজ সমূহ একজন গ্রাফিক ডিজাইনার করে থাকেন।

গ্রাফিক ডিজাইনারের কাজের ক্ষেত্র সমূহঃ

গ্রাফিক ডিজাইন বর্তমান সময়ে এমন এক ধরনের পেশা যার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এখন প্রায় সব ধরনের কর্মক্ষেত্রেই। একটি বিস্কুটের প্যাকেট থেকে শুরু করে, কোন কোম্পানির ব্রান্ড আইডেন্টিটি অথবা কোন পণ্যের প্রচার এবং প্রসার, বা দৃষ্টিনন্দন বই ডিজাইন কিংবা সিনেমা বা অ্যানিমেশন। গ্রাফিক ডিজাইনারের পদচারণা রয়েছে সর্বক্ষেত্রে।
বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমনঃ বিজ্ঞাপনী সংস্থা, দেশীয় এবং বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি, ছোট বড় প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং আইটি কোম্পানি সহ সরকারি নানা জায়গায় ও বর্তমানে গ্রাফিক ডিজাইনের কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে গ্রাফিক ডিজাইনের সব থেকে সুবিধার জায়গাটি হচ্ছে এখানে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে চাকুরী না করেও, দেশে ও দেশের বাইরে ফ্রিল্যান্সিং করেও স্বাবলম্বী হওয়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে লাখ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যাদের অধিকাংশই গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

সুতারং গ্রাফিক ডিজাইন এমন এক ক্ষেত্র যেখানে আপনি দক্ষ একজন ডিজাইনার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলে, কাজের ক্ষেত্রের শেষ নেই বলা যায়।



ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইনঃ

উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইন বর্তমান সময়ে অন্যান্য অনেক পেশার থেকে আকর্ষণীয়। যেখানে অন্য বিষয়ে পড়ালেখা করে পছন্দ মত একটা চাকুরী নিতে কমবেশি সবাইকে বেগ পেতে হয়। সে জায়গায়, গ্রাফিক ডিজাইন প্রত্যেককে নিজ থেকে স্বাবলম্বী এবং অনেক ভালো একটি উপার্জনের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
তাই গতানুগতিক পড়াশোনার বাইরে, কেউ যদি গ্রাফিক ডিজাইন বা আর্ট এর প্রতি আগ্রহ থাকে! তবে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের পরে, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে গ্রাফিক ডিজাইনে পড়াশোনা করতে পারেন।
বাংলাদেশ গ্রাফিক ডিজাইন বা চারুকলা নিয়ে যদি কেউ পড়াশোনা করতে চান তাহলে আমার এ লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন। এখানে এ নিয়ে বিস্তারিত লেখা আছে।

লিঙ্কঃ

অন্যদিকে অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইন শেখা এবং এ নিয়েও কাজ করা যেতে পারে। যা আপনার একাডেমিক সাবজেক্টের পাশাপাশি আরও একটি নতুন স্কিল আপনার ক্যারিয়ারে যোগ করবে এবং পড়াশোনা করা অবস্থায় আপনাকে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা প্রদান করবে।
তাছাড়া কেউ যদি পড়াশোনা শেষ করার পর, তার কাঙ্খিত চাকরি না পেয়ে থাকেন। তবে সময় নষ্ট না করে গ্রাফিক ডিজাইন অথবা ফ্রিল্যান্স কাজ করা যায় এরকম কোন একটি বিষয় শিখে নিতে পারেন। যা আপনাকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করবে আশা করা যায়।
উপরোক্ত লেখার মাধ্যমে আপনারা গ্রাফিক ডিজাইন কি? গ্রাফিক ডিজাইনাররা কি ধরনের কাজ করে থাকেন? এর ক্যারিয়ার অপরচুনিটি গুলো কোথায় রয়েছে? এবং ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইন কতটুকু সম্ভাবনাময়? এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারলেন।


আমার এ লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে নিজ থেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা এবং ক্যারিয়ারের শুরুতেই, যুগোপযোগী বিষয়ে নিজের একাডেমিক সাবজেক্ট নির্বাচনে সাহায্য করা। আমাদের অনেকেরই গতানুগতিক পড়াশোনার বাইরে ক্রিয়েটিভ অথবা টেকনোলোজিকাল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার আগ্রহ থাকে। কিন্তু পরিবারের চাপে অথবা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে নিজের ভালোলাগার বিষয়ের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করতে হয়।তাই আমি মন থেকে এটাই চাই, গতানুগতিক পড়াশোনার ভিতরে আমাদের যুব সমাজ আটকে না থাকুক। যুগপযোগী কারিগরি যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে তারা আত্মনির্ভরশীল হোক।

ধন্যবাদ।

Previous Post Next Post

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন