গ্রাফিক ডিজাইনারের আয় | Salary of a Graphic Designer

গ্রাফিক ডিজাইনারের আয় | Salary of a Graphic Designer

বর্তমান সময়ে গ্রাফিক ডিজাইনকে যারা পেশা হিসেবে নিতে চায়, তাদের সিংহভাগই এই পেশায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করে এ ক্ষেত্রের আয়ের দিকটা চিন্তা করে। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরেও যেখানে হাজার হাজার গ্রাজুয়েটরা তাদের পছন্দমত চাকুরীটি পাচ্ছে না। ঠিক একই সময়ে একজন গ্রাজুয়েশন না করা গ্রাফিক ডিজাইনার অনেক আগে থেকেই তার যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো একটি উপার্জন করছে।
এসব কারনে তাই গ্রাফিক ডিজাইন শেখার আগ্রহ যেমন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ঠিক তেমনিভাবে এ পেশায় দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। এ পেশায় যাওয়ার আগে তাই অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, একজন গ্রাফিক ডিজাইনার কেমন উপার্জন করে থাকেন? (How much a graphic designer earn? / average income of graphic designer)
আমার এই আলোচনায়, একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে আপনি কোন কোন ক্ষেত্র থেকে কেমন উপার্জন করতে পারেন? (salary for a graphic designer) তার একটি বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।


গ্রাফিক ডিজাইনারের আয় নিয়ে আলোচনা করার পূর্বেই গ্রাফিক ডিজাইনারের কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী উপার্জনের জায়গাকে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হলো ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) করে আয় এবং দ্বিতীয়টি হল দেশের বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে আয় (Graphic Design Jobs)।

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার কেমন আয় করে থাকেন?

আমার এ লেখাটি কোন বিজ্ঞাপন বা অনলাইন কোর্সের শিক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য নয় বিধায় আমি বাস্তব চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আপনারা ইউটিউব ভিডিও বা বিভিন্ন লেখায় দেখে থাকবেন,একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ফ্রিল্যান্সিং করে হাজার হাজার ডলার ইনকাম করছে। এরকম দেখে অনেকেই মনে করেন যে, গ্রাফিক ডিজাইন শিখলেই হয়তো শুরু থেকে এমন আয় করা যাবে!
এখানে একটি বিষয় আপনাকে বুঝতে হবে। কোন একটি কাজ শিখে সেখানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে বেশ সময় লাগে। তাই শুরুর দিকে এমন উপার্জন অনেকেরই না হতে পারে৷ তবে আস্তে আস্তে অনেকেই অনেক ভালো উপার্জন করে।
তবে গ্রাফিক ডিজাইনের বিস্তর ক্ষেত্রে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনি কি ধরনের কাজ করছেন, তার উপরেও আপনার আয়ের সংখ্যাটি অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমনঃ আপনি এমন একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন যার বর্তমান মার্কেটপ্লেস ভ্যালু অনেক বেশি এবং সে কাজের জন্য প্রতিযোগিতা (competition) কম। সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবেই আপনার আয় বেশি হবে। UI/UX Design, Motion Graphics, 3d design, Animation, Branding ইত্যাদি বিষয়ের প্রজেক্টগুলো সাধারনত একটু বড় ধরনের হয়। তো সেখান থেকে আয়ের পরিমান একটু বেশি হয়।

আপনি যদি মার্কেটপ্লেসে রেগুলার থাকেন তবে ২-১ বছরের মধ্যে ৫০০-১০০০ ডলার ইনকাম আসতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা কয়েক হাজার ডলার ও হতে পারে। তাছাড়া, অনেকে রিমোট জব করেও ৫০০ থেকে ২ হাজার ডলার বা তার ও বেশি আয় করতে পারেন।
তাছাড়া অনেকে দেশের মার্কেটে ও ফ্রিল্যান্স কাজ করেন লোকাল ক্লায়েন্ট বা বিভিন্ন কোম্পানির সাথে।

অন্যদিকে মার্কেট প্লেসের বাইরে ফ্রিল্যান্সিং করে আয়ের আরেকটি মাধ্যম হল প্যাসিভ আয়। Google Adsense এর আন্ডারে YouTube কন্টেন্ট অথবা website আর্টিকেল লিখে, কিংবা Shutterstock, Freepik, Adobe stock, Envato Elements ইত্যাদি সাইটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন, PSD/Vector Template, Motion Graphics ইত্যাদি আপলোড করে সেখান থেকে ডাউনলোডের উপরে একটা আয় করা যায়। এখানে আপনার করা ডিজাইনটি যত বেশি ডাউনলোড হবে, তত বেশি আপনার আয় হবে।
Google Adsense এর আয়টা নির্ভর করে advertisement এর উপর৷ আপনার ভিডিও বা ওয়েবসাইটে কত ভিজিটর আসলো, ভিজিটরা ad এ কত ক্লিক করলো এবং অবশ্যই সেদিনের CPC, RPM ইত্যাদি বিষয়ের উপর।
অর্থাৎ মার্কেটপ্লেসের মত প্যাসিভ ইনকামেও দেখা যাচ্ছে আপনার কন্টেন্ট যত বেশি শক্তিশালী এবং ক্রিয়েটিভ, তত বেশি ভিজিটর আপনার কন্টেন্ট ডাউনলোড দিচ্ছে বা দেখছে৷ সে অনুয়ায়ী আয়ের পরিমানও বাড়ছে।
অনেক গ্রাফিক ডিজাইনার রয়েছে যারা মার্কেপ্লেসের পাশাপাশি প্যাসিভ সাইটগুলোতে নিয়মিত কাজ করছেন এবং প্রতি মাসে ভালো একটা আয় করছেন। এ আয় সর্বনিম্ন থেকে শুরু করে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
সুতারং উপরের অংশটুকুর আলোচনার মাধ্যমে বোঝা গেল, একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের ফ্রিল্যান্সিং করে আয়, তার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে। এটাকে অনুমান করে বলা কঠিন। তবে এতটুকু বলা যায় ৩-৪ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন গ্রাফিক ডিজাইনার দেশের বাজারের বড় অনেক চাকুরীর থেকে বেশি আয় করেন।।

দেশে চাকুরী করে আয়ঃ

অনেক গ্রাফিক ডিজাইনার রয়েছেন যারা দেশে চাকুরী করে থাকেন। দেশের মার্কেটে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন। একজন গ্রাফিক ডিজাইনার কোথায় কোথায় চাকুরী করতে পারেন সে সম্পর্কে জানতে চাইলে আমারে নিচের লেখাটি পড়ুন।

লিঙ্কঃ গ্রাফিক ডিজাইনাররা কি ধরনের কাজ করেন?

বিগেনার গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে বাংলাদেশে একজন ব্যাক্তি ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায় তার ক্যারিয়ার শুরু করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে যে ব্যাক্তির গ্রাফিক ডিজাইন বা চারুকলা ডিগ্রি (BFA & MFA) বা ডিপ্লোমা থাকেন তাদের স্যালারি একটু বেশি হয়। তবে এক্ষেত্রে একটি মজার বিষয় হল, মোটামুটি ২-১ বছরের অভিজ্ঞতা যখন আপনি অর্জন করবেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির তুলনায় আপনার কাজের কোয়ালিটিকে মূল্যায়ন করা বেশি হবে। তাই যাদের ডিগ্রি নেই তাদের শুরুটা একটু কমে হলেও আস্তে আস্তে সেটা বেড়ে থাকে। তাছাড়া অনেক এজেন্সি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি তে ৫০ হাজারেও অনেকের ক্যারিয়ার শুরু হয়। মোটকথা হল আপনার কাজের দক্ষতা যত ভালো আপনার শুরুর আয় তত বেশি হবে।

একজন বিগেনার ডিজাইনার যখন ইন্টারমিডিয়েট বা সিনিয়র ডিজাইনার বা আর্ট ডিরেক্টর হন তখন তার আয় ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষের ও বেশি হয়ে থাকে। UI/UX বা Animation ইন্ডাস্ট্রি তে এ আয় তখন আরো বেশি হতে পারে।

উপরের লেখার মাধ্যমে আপনারা কম বেশি ধারণা পেলেন, একজন গ্রাফিক ডিজাইনার দেশের বাজারে চাকরি করে অথবা ফ্রিল্যান্সিং করে কেমন উপার্জন করতে পারেন। অনেকের মনের অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর আশা করি পেয়ে গেলেন। এখন আপনার কাজ হল আয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে দক্ষতা অর্জনে সময় দেয়া। পুরো লেখাটিতেই আমি বোঝাতে চেয়েছি,

"ডিজাইনার হিসেবে আপনার আয় আপনার দক্ষতার সমানুপাতিক"।

তাই নিজেকে সময় দিন। অনেক বেশি কাজ করুন। থ্রি ইডিয়টস মুভির একটা ডায়লগ দিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাচ্ছি,

"KAMYAB HONE KE LIYE NAHI KABIL HONE KE LIYE PADHO, KAMYABHI JHAK.. MAR KE PICHE AYEGI."
AMIR KHAN

ধন্যবাদ।
Previous Post Next Post

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন